পণ্যবয়কট: ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত ও প্রমাণ

Daily Inqilab নূরুল হক

২৯ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম

 

সম্প্রতি কোকাকোলার একটি বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে বয়কটের তীব্র ঝড় উঠেছে। বিশেষ-সাধারণ নির্বিশেষে মুসলিমদের বিশাল এক জনগোষ্ঠী এ বয়কটকার্যে অংশ নিয়েছে। বয়কটের নেপথ্য কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ফিলিস্তিনের মাজলুম মুসলিম জনতার বিরুদ্ধে জায়নবাদী ইসরাঈলের পক্ষে তাদের অবস্থান গ্রহণ ও সহায়তা প্রদান। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে নানা উপলক্ষ্যে মুসলিম সমাজে কোনো কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পণ্য বর্জনের ডাক উঠেছিল। এমন প্রেক্ষাপটে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, পণ্যবয়কটের বিষয়টি কি শরীয়তসম্মত? ইসলামের ইতিহাসে পণ্যবয়কট করার কোন দৃষ্টান্ত আদৌ রয়েছে কি-না? সঠিক বিষয় না জানার ফলে অনেক মুসলিমই বয়কটের এ মিছিলে গুরুত্বের সাথে অংশ নেয় না। বরং একে হালকা চোখে দেখে। কার্যকরী কোন পদক্ষেপ বলে মনে করে না। আজকের এ লেখায় তাদের সে প্রশ্নের জবাব তুলে ধরা হয়েছে।

ইসলামে পণ্যবয়কট : পণ্যবয়কট নতুন বা অভূতপূর্ব কোন বিষয় নয়। বরং এর ইতিহাস অনেক পুরোনো। আপনি জেনে অবাক হবেন, স্বয়ং রাসূলে কারীম (সা.) এর যুগেই আমরা এর দৃষ্টান্ত খুঁজে পাই। আল্লাহর রসূল (সা.) এর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ছুমামা ইবনে উসাল রাদিআল্লাহু আনহু। যিনি ইয়ামামা অঞ্চলের বনু হানিফ গোত্রের সর্দার ছিলেন। রাসূলের সাহাবীদের হাতে বন্দী হয়ে তিনি মদিনায় আসলেন। তিনদিন বন্দী অবস্থায় থাকার পর তার প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষমাসূলভ আচরণে মুগ্ধ হয়ে তিনি ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন।

ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসূলের অনুমতি নিয়ে তিনি উমরাহ পালন করতে মক্কা গমন করলেন। যাওয়ার পর মক্কায় তার পূর্বপরিচিত কাফেররা ইসলাম গ্রহণের কারণে তাকে লজ্জা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো, ‘সুমামা! তুমি তো বে-দীন হয়ে গেলা! জবাবে অত্যন্ত দৃঢ় প্রত্যয়ে তিনি বললেন, ‘না-তো! আমি বে-দীন হইনি; বরং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি।’ অতঃপর দৃপ্ত কণ্ঠে মক্কার কাফেরদের সামনে ঘোষণা দিলেন, ‘আল্লাহর কসম! ইয়ামামা থেকে একটি গমের দানাও তোমাদের কাছে পৌঁছবে না, যতক্ষণ না আল্লাহর রাসূল অনুমতি দেন।’ (সহীহ মুসলম : ৪৪৩৭)।

ইয়ামামা অঞ্চল ছিল মক্কার লোকদের খাদ্য আমদানীর একমাত্র জায়গা। ফলে হুঁশিয়ারি অনুযায়ী নিজ অঞ্চলে গিয়ে ছুমামা রাদিআল্লাহু আনহু যখন তাদের কাছে পণ্য রফতানি বন্ধ করে দিলেন, তখন খাদ্যের অভাবে মক্কাবাসী ভয়াবহ রকমের বিপর্যয়ে পতিত হল। দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়ে পড়ল। মক্কার কাফেরদের আত্মার সব পানি বিগলিত হল। অগত্যা কোন উপায় না দেখে তারা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পত্র লিখল। তাকে আতœীয়তার দোহাই দিয়ে ছুমামাকে খাদ্য সরবরাহের জন্য পত্র লিখতে অনুরোধ করল। অতঃপর তাদের প্রতি সদয় হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুমামাকে তার বয়কট প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়ে তার কাছে পত্র লিখেন। উপরোক্ত ঘটনা থেকে পণ্যবয়কটের বৈধতা প্রমাণিত হয়।

বিশিষ্ট গবেষক আলেম শায়েখ হুসামুদ্দীন আফফানা বলেন-‘সুমামা রাদিআল্লাহু আনহু যা করেছেন তা এক প্রকার অর্থনৈতিক বয়কট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ পদক্ষেপে বাধা দেননি। তার উপর কোনো আপত্তি করেননি। এ বয়কট অব্যাহত ছিল- রাসূলুল্লাহ (সা.) তা উঠিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি লেখা পর্যন্ত।’ (ফাতাওয়া ইয়াসআলুনাক ১১/২৪)। এ ঘটনা থেকে এটাও প্রমাণিত হয় যে, পণ্যবয়কটের কার্যকারিতা ও প্রভাব অনেক শক্তিশালী। এর দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানের শত্রুদেরকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলা সম্ভব। অতএব বিশ্বের সকল বা অধিকাংশ মুসলিম এক হয়ে যদি শত্রুর বিরুদ্ধে পণ্যবয়কটে অংশ নেয়, তবে এর মাধ্যমে তাদের অর্থনীতির ভীত কাঁপিয়ে তোলা, তাদের মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। তবে বয়কটের এ কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে বয়কটকে একটানা অনেকদিন চালু রাখতে হবে; অন্যথায় সাময়িক উত্তেজনা ও কার্যত পণ্য বর্জন না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বয়কট, বয়কট’ রব তোলা তেমন স্থায়ী কোনো ফল বয়ে আনবে না।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

টাইব্রেকারে রোনালদোর পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিতে ফ্রান্স

টাইব্রেকারে রোনালদোর পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিতে ফ্রান্স

৩৬ বছরের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হল জার্মানির,রুদ্ধশ্বাস জয়ে সেমিতে স্পেন

৩৬ বছরের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হল জার্মানির,রুদ্ধশ্বাস জয়ে সেমিতে স্পেন

খেলতে খেলতেই মারা গেলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া

খেলতে খেলতেই মারা গেলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া

স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর তার সাথে যৌন সম্পর্ক করা প্রসঙ্গে।

স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর তার সাথে যৌন সম্পর্ক করা প্রসঙ্গে।

লোক নাট্যদলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

লোক নাট্যদলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

১৩ বছর পর অভিনয়ে ফিরছেন মেহের আফরোজ শাওন

১৩ বছর পর অভিনয়ে ফিরছেন মেহের আফরোজ শাওন

মাধ্যমিক পর্যায়ে কোডিং শিক্ষা প্রসঙ্গে

মাধ্যমিক পর্যায়ে কোডিং শিক্ষা প্রসঙ্গে

প্রাকৃতিক রক্ষাব্যুহ সুন্দরবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

প্রাকৃতিক রক্ষাব্যুহ সুন্দরবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

অসত্য তথ্য ও পরিসংখ্যান থেকে বের হয়ে আসতে হবে

অসত্য তথ্য ও পরিসংখ্যান থেকে বের হয়ে আসতে হবে

চাঁদাদাবি করায় আখাউড়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

চাঁদাদাবি করায় আখাউড়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

পশ্চিম তীরে পাঁচ সহস্রাধিক নতুন আবাসন অনুমোদন নেতানিয়াহুর

পশ্চিম তীরে পাঁচ সহস্রাধিক নতুন আবাসন অনুমোদন নেতানিয়াহুর

হীরার গয়নায় শাস্তির মুখে বলসোনারো

হীরার গয়নায় শাস্তির মুখে বলসোনারো

ইসরাইলকে থামাতে হবে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে : এরদোগান

ইসরাইলকে থামাতে হবে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে : এরদোগান

মানুষের কামড়ে সাপের মৃত্যু

মানুষের কামড়ে সাপের মৃত্যু

রকেট হামলায় ইসরাইলি কোম্পানি কমান্ডার নিহত

রকেট হামলায় ইসরাইলি কোম্পানি কমান্ডার নিহত

ভোট দিয়ে যে আহ্বান জানালেন খামেনি

ভোট দিয়ে যে আহ্বান জানালেন খামেনি

যুক্তরাষ্ট্র বাহিনীকে জাপানের হুঁশিয়ারি

যুক্তরাষ্ট্র বাহিনীকে জাপানের হুঁশিয়ারি

গাজা-ইসরাইল যুদ্ধে পশ্চিমের নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি

গাজা-ইসরাইল যুদ্ধে পশ্চিমের নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি

এসসিও’র শীর্ষ সম্মেলনে মোদি কেন গেলেন না

এসসিও’র শীর্ষ সম্মেলনে মোদি কেন গেলেন না

জিম্মি প্রশ্নে মধ্যস্থতাকারী দল পাঠাবে ইসরাইল

জিম্মি প্রশ্নে মধ্যস্থতাকারী দল পাঠাবে ইসরাইল